
আপনি কি কখনো ভেবেছেন যে আপনার মার্কেটিং বাজেট দিয়ে Google Ads নাকি Facebook Ads-এ বিনিয়োগ করলে বেশি ROI পাবেন?
দুটি প্ল্যাটফর্মই শক্তিশালী, কিন্তু একটি আপনার ব্যবসার জন্য অন্যটির চেয়ে বেশি উপযুক্ত হতে পারে। Google Ads vs Facebook Ads এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আপনার টাকা কোথায় খরচ করা উচিত তা বোঝা একটু জটিল।
আমি গত পাঁচ বছরে ৫০টিরও বেশি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছি এবং একটা জিনিস নিশ্চিত – প্ল্যাটফর্ম নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত আপনার হাজার হাজার টাকা নষ্ট করতে পারে।
আসুন আপনার ব্যবসার জন্য কোনটি সঠিক তা খুঁজে বের করি। আর শুরু করার আগে, আমি আপনাকে একটি এমন জিনিস দেখাবো যা প্রায় সবাই ভুল করে…
গুগল অ্যাডস এর প্রাথমিক বিবরণ

গুগল অ্যাডস কিভাবে কাজ করে
গুগল অ্যাডস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি প্রথমে একটা জিনিস বুঝেছি – এটি ঠিক সেই সময়ে আপনার ব্যবসাকে সামনে নিয়ে আসে যখন লোকেরা আপনার পণ্য বা সেবার খোঁজ করছে। এটাই এর সবচেয়ে বড় শক্তি!
যখন কেউ গুগলে কিছু সার্চ করে, গুগল অ্যাডস পেইড সার্চ রেজাল্টগুলো সবার উপরে দেখায়। আমি লক্ষ্য করেছি, প্রতি মাসে ৮.৫ বিলিয়নেরও বেশি সার্চ কোয়েরি গুগলে হয় – এই বিশাল মার্কেটপ্লেসে আমি আমার বিজ্ঞাপনগুলো ঠিক সেই দর্শকদের সামনে হাজির করতে পারি যারা আমার সেবা খুঁজছে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হল – আমি শুধু তখনই অর্থ ব্যয় করি যখন কেউ আমার অ্যাডে ক্লিক করে (পে-পার-ক্লিক)। কোনো ক্লিক না হলে, কোনো খরচও নেই।
গুগল অ্যাডস এর বিভিন্ন ধরণের ক্যাম্পেইন
আমার অভিজ্ঞতায়, গুগল অ্যাডসের বিভিন্ন ক্যাম্পেইন টাইপ আমাকে নানা উদ্দেশ্য পূরণ করতে সাহায্য করেছে:
- সার্চ ক্যাম্পেইন: এটি আমার সবচেয়ে প্রিয় – এখানে যখন কেউ নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড সার্চ করে, তখন তাদের সামনে আমার অ্যাড দেখানো হয়।
- ডিসপ্লে ক্যাম্পেইন: আমি এই ক্যাম্পেইন ব্যবহার করে গুগলের ডিসপ্লে নেটওয়ার্কে থাকা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখাতে পারি। ইমেজ, টেক্সট, আর ভিডিও – সব ব্যবহার করা যায়!
- ভিডিও ক্যাম্পেইন: ইউটিউবে অ্যাড চালানোর জন্য এটি দারুণ – সেখানে আমার টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে পারি।
- শপিং ক্যাম্পেইন: আমার প্রোডাক্ট ক্যাটালগ থেকে অ্যাড তৈরি করে গুগল শপিং এবং সার্চে প্রদর্শন করা যায়।
- অ্যাপ ক্যাম্পেইন: আমার অ্যাপ ডাউনলোড বাড়াতে এটি খুবই কার্যকর।
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এর সুবিধা
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং আমাকে অবিশ্বাস্য সুবিধা দিয়েছে:
- উচ্চ ইনটেন্ট: যারা সার্চ করছে তারা ইতিমধ্যেই কিছু খুঁজছে – তাই তাদের কনভার্ট করা অনেক সহজ।
- টার্গেটেড ট্রাফিক: আমি শুধু সেই লোকদের দেখাই যাদের সম্ভাবনা বেশি।
- দ্রুত ফলাফল: প্রচারণা শুরু করার সাথে সাথেই রেজাল্ট দেখতে পাই।
- মাপযোগ্য: আমার প্রতিটি টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে, কী ফলাফল আসছে – সবই ট্র্যাক করতে পারি।
কনভার্শন ট্র্যাকিং এবং মেজারমেন্ট টুলস
আমার মতে, গুগল অ্যাডসের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হল এর ট্র্যাকিং টুলস। আমি নিম্নলিখিত জিনিসগুলো ট্র্যাক করতে পারি:
- কনভার্শন: বিক্রয়, সাইন-আপ, ডাউনলোড – যা-ই চাই!
- ROI: আমি প্রতি টাকায় কত আয় করছি।
- গ্রাহক আচরণ: কারা আমার ওয়েবসাইটে আসছে, কী করছে।
- অ্যাট্রিবিউশন মডেল: গ্রাহকের যাত্রাপথে কোন পয়েন্টগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ডিসপ্লে অ্যাডস ও ভিডিও অ্যাডের মাধ্যমে ব্র্যান্ড ভিজিবিলিটি বাড়ানো
ব্র্যান্ড নেম বিল্ড করতে আমি ডিসপ্লে এবং ভিডিও অ্যাড ব্যবহার করে দারুণ ফল পেয়েছি। ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক ২ মিলিয়নেরও বেশি ওয়েবসাইটে পৌঁছায়! আমার কৌশল:
- রিমার্কেটিং: যারা আমার সাইট ভিজিট করেছে তাদের পুনরায় টার্গেট করা।
- সমিল অডিয়েন্স: আমার বর্তমান গ্রাহকদের মতো নতুন লোকদের খুঁজে বের করা।
- ভিজ্যুয়াল স্টরিটেলিং: ভিডিও অ্যাড দিয়ে গভীর সংযোগ তৈরি।
গুগল অ্যাডস এর খরচ কাঠামো
গুগল অ্যাডসে আমি আমার বাজেট অনুযায়ী খরচ করতে পারি। কোনো মিনিমাম খরচ নেই। আমার অভিজ্ঞতায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট:
- CPC (কস্ট-পার-ক্লিক): এটি শিল্প, প্রতিযোগিতা এবং কীওয়ার্ড অনুসারে ভিন্ন হয় – আমি ৫ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত CPC দেখেছি।
- দৈনিক বাজেট: আমি প্রতিদিন কত খরচ করতে চাই তা নির্ধারণ করতে পারি।
- অ্যাড কোয়ালিটি স্কোর: ভাল স্কোর = কম খরচ, বেশি এক্সপোজার।
ফেসবুক অ্যাডস এর প্রাথমিক বিবরণ

ফেসবুক অ্যাডস কিভাবে কাজ করে
ফেসবুক অ্যাডস সম্পর্কে কথা বলতে গেলে আমাকে প্রথমেই বলতে হবে, এটা একটা খুবই ডায়নামিক প্লাটফর্ম। এখানে বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রক্রিয়াটা সহজ কিন্তু শক্তিশালী। আমি যখন প্রথম ফেসবুক অ্যাডস ব্যবহার শুরু করেছিলাম, তখন দেখেছিলাম যে এখানে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মূল ভিত্তি হল অডিয়েন্স টার্গেটিং।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ফেসবুক অ্যাডস কাজ করে ব্যবহারকারীদের ডেমোগ্রাফিক, আচরণগত এবং আগ্রহের ডাটা সংগ্রহ করে। এই ডাটা ব্যবহার করে আমরা খুব নির্দিষ্ট টার্গেট অডিয়েন্সে আমাদের বিজ্ঞাপন পৌঁছাতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমি যদি ঢাকার ২৫-৩৫ বছর বয়সী ফিটনেস উৎসাহী মহিলাদের কাছে পৌঁছাতে চাই, ফেসবুক আমাকে সেই সুযোগ দেয়।
ফেসবুক অ্যাডস এর বিভিন্ন ফরম্যাট
ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য আমার কাছে অনেক ফরম্যাট আছে। আমি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি:
- ইমেজ অ্যাডস: সহজ তবে কার্যকরী, একটি আকর্ষণীয় ছবি দিয়ে আমার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস দেখাতে পারি।
- ভিডিও অ্যাডস: আমার প্রিয় ফরম্যাট, কারণ এতে আমি গল্প বলতে পারি এবং দর্শকদের আরও বেশি সময় ধরে ধরে রাখতে পারি।
- ক্যারোসেল অ্যাডস: একাধিক ইমেজ বা ভিডিও দেখাতে পারি, যা প্রোডাক্ট লাইন বা ফিচার দেখানোর জন্য দারুণ।
- ইনস্টান্ট এক্সপেরিয়েন্স অ্যাডস: ব্যবহারকারীরা ফেসবুক ছেড়ে যাওয়া ছাড়াই আমার কন্টেন্টের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারে।
- কালেকশন অ্যাডস: খুচরা ব্যবসার জন্য আদর্শ, যেখানে ব্যবহারকারীরা প্রোডাক্টগুলো স্ক্রল করতে পারে।
Facebook Pixel ও Conversion API ব্যবহারের সুবিধা
আমি Facebook Pixel কে আমার সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মনে করি। এটি একটি কোড যা আমি আমার ওয়েবসাইটে ইনস্টল করি, যা ব্যবহারকারীদের আচরণ ট্র্যাক করে। Facebook Pixel আমাকে সাহায্য করে:
- কনভার্শন ট্র্যাক করতে (কে কিনছে, কে ফর্ম পূরণ করছে)
- ওয়েবসাইট ভিজিটরদের রিটার্গেট করতে
- কোন কোন অ্যাড কাজ করছে তা বুঝতে
Conversion API হল Facebook Pixel এর একটি শক্তিশালী সম্প্রসারণ। এটি সার্ভার-সাইড থেকে ডাটা পাঠায়, যা অ্যাড-ব্লকার এবং ব্রাউজার সীমাবদ্ধতা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে। আমি দুটি একসাথে ব্যবহার করে আমার কনভার্শন ট্র্যাকিং আরও নির্ভুল করেছি।
রিমার্কেটিং ও কাস্টম অডিয়েন্স সিস্টেম
আমার মতে, ফেসবুক অ্যাডসের সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য হল এর রিমার্কেটিং ক্ষমতা। আমি সেই সব লোকদের টার্গেট করতে পারি যারা:
- আমার ওয়েবসাইট ভিজিট করেছে
- আমার অ্যাপ ব্যবহার করেছে
- আমার ভিডিও দেখেছে
- আমার ফেসবুক পেজের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করেছে
কাস্টম অডিয়েন্স সিস্টেম আমাকে আমার ইমেইল লিস্ট বা ফোন নম্বর আপলোড করতে দেয় এবং ফেসবুক সেই লোকদের খুঁজে বের করে। তারপর আমি “লুকালাইক অডিয়েন্স” তৈরি করতে পারি – অর্থাৎ এমন লোক যারা আমার বর্তমান গ্রাহকদের মতো।
গুগল অ্যাডস এবং ফেসবুক অ্যাডস এর মধ্যে পার্থক্য

উদ্দেশ্য ভিত্তিক পার্থক্য
গুগল অ্যাডস আর ফেসবুক অ্যাডস-এর মৌলিক উদ্দেশ্যে আকাশ-পাতাল তফাত দেখতে পাই। গুগল অ্যাডস মূলত সার্চ ইন্টেন্ট নিয়ে কাজ করে – মানে কেউ কিছু খুঁজছে, আমি তাকে সমাধান দিচ্ছি। আমি যখন গুগল অ্যাডস চালাই, তখন সেই সব গ্রাহকদের টার্গেট করি যারা আমার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে ইতিমধ্যেই খুঁজছে।
অন্যদিকে, ফেসবুক অ্যাডস ইন্টারাপ্ট মার্কেটিং – মানে লোকজন স্ক্রল করছে, আর আমি তাদের ফিডে ঢুকে পড়ছি। এখানে আমি নতুন টার্গেট অডিয়েন্স তৈরি করি, যারা আমার প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভাবেনি, কিন্তু তাদের আগ্রহী করে তুলতে পারি।
টার্গেটিং ক্ষমতা
আমি ফেসবুকে ডেমোগ্রাফিক, ইন্টারেস্ট, বিহেভিয়ার, লাইফস্টাইল – সব দিক থেকে টার্গেট করতে পারি। এমনকি লোকেরা কী পছন্দ করে, কোন পেইজ ফলো করে, কোন ইভেন্টে যাবে – এসব ডাটা দিয়ে সুপার স্পেসিফিক অডিয়েন্স বানাতে পারি। ফেসবুকের কাছে থাকা ব্যক্তিগত তথ্যের পাহাড় আমার বিজ্ঞাপনকে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়।
গুগল অ্যাডসে আমি কিওয়ার্ড, সার্চ ইন্টেন্ট, ডিভাইস টাইপ, লোকেশন দিয়ে টার্গেট করি। একটা বড় সুবিধা হলো, গুগল আমাকে রি-টার্গেটিং করতে দেয় – মানে আমার ওয়েবসাইট ভিজিট করা লোকদের আবার টার্গেট করা। কিন্তু ফেসবুকের মতো এত ডিটেইল পার্সোনাল ডাটা দিয়ে টার্গেটিং করা যায় না।
ক্রিয়েটিভ কন্ট্রোল ও কনটেন্ট ফোকাস
ফেসবুকে আমি ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং করি – ছবি, ভিডিও, ক্যারোসেল, আর কত কি! স্ক্রল করতে করতে মানুষের চোখ ধরার জন্য আমাকে আকর্ষণীয় ভিজ্যুয়াল তৈরি করতে হয়। এখানে কনটেন্ট এন্গেজমেন্ট-এর জন্য ডিজাইন করা।
গুগলে আমার অ্যাড বেশিরভাগই টেক্সট-বেসড। সার্চ অ্যাডে শব্দের জাদু দেখাতে হয়, হেডলাইন আর ডেসক্রিপশন দিয়ে গ্রাহককে কনভার্ট করতে হয়। ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক বা ইউটিউবে ভিজ্যুয়াল ব্যবহার করলেও, মূল ফোকাস থাকে গ্রাহকের সার্চ ইন্টেন্টে সাড়া দেওয়া।
কাস্টমার জার্নিতে অবস্থান
আমি কাস্টমার জার্নির বিভিন্ন স্টেজে দুটো প্ল্যাটফর্মকে আলাদাভাবে ব্যবহার করি:
কাস্টমার জার্নি স্টেপ | গুগল অ্যাডস | ফেসবুক অ্যাডস |
অ্যাওয়ারনেস | কম এফেক্টিভ | খুব এফেক্টিভ |
কনসিডারেশন | মডারেট | খুব এফেক্টিভ |
ইনটেনশন | খুব এফেক্টিভ | মডারেট |
পারচেজ | খুব এফেক্টিভ | কম এফেক্টিভ |
খরচ এবং আরওআই তুলনা
গুগল অ্যাডসে আমার CPC (ক্লিক প্রতি খরচ) সাধারণত বেশি হয়, কিন্তু কনভার্শন রেটও বেশি পাই। কারণ? সার্চ ইন্টেন্ট। লোকেরা ইতিমধ্যেই কিছু খুঁজছে, তাই তারা অ্যাকশন নিতে বেশি রেডি।
ফেসবুকে CPC কম থাকে, কিন্তু কনভার্শন রেট কম হতে পারে। তবে লিড জেনারেশন, ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস আর টপ অফ ফানেলে আমি ফেসবুকে ভাল ROI পাই।
ব্র্যান্ড সচেতনতা বনাম সরাসরি বিক্রয়
আমি যখন ব্র্যান্ড বিল্ড করতে চাই, নতুন টার্গেট অডিয়েন্স খুঁজতে চাই, তখন ফেসবুকে মনোযোগ দেই। এর ভিজ্যুয়াল ফরম্যাট, স্টোরিটেলিং এবং ইমোশনাল কানেকশন তৈরি করার ক্ষমতা অসাধারণ।
কিন্তু যখন কেউ আমার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে খুঁজছে, বা পারচেস করতে রেডি, তখন গুগল অ্যাডসে ফোকাস করি। গুগল অ্যাডস ডাইরেক্ট সেলস জেনারেট করতে দারুণ কাজ করে।
আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করা
আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কে
আমি যখনই কোন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করি “আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কারা?” – তখন অনেকেই বলেন “সবাই”! কিন্তু সত্যি বলতে, সবাইকে টার্গেট করতে গেলে আসলে কাউকেই সঠিকভাবে টার্গেট করা হয় না।
গুগল অ্যাডস এবং ফেসবুক অ্যাডস – দুটোই শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এদের ব্যবহারকারীদের মধ্যে পার্থক্য আছে। ফেসবুকে আমি সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ, মজার কন্টেন্ট দেখতে যাই। অন্যদিকে, গুগলে আমি সমাধান খুঁজতে যাই – একটা নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর বা সমস্যার সমাধান।
আমার টার্গেট অডিয়েন্স যদি 45+ বয়সী পুরুষরা হয়, তাহলে গুগল অ্যাডস বেশি কার্যকরী হতে পারে। কারণ এই বয়সের মানুষজন ফেসবুকে তুলনামূলক কম সক্রিয়। আবার 18-35 বছর বয়সী তরুণদের টার্গেট করতে চাইলে, ফেসবুক অ্যাডস আমার জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম হতে পারে।
আপনার বিক্রয় চক্র (Sales Cycle) দীর্ঘ না ছোট, সেটা বিবেচনায় আনা
আমি যখন একটি আইফোন কিনি, তখন আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া হয়তো মাত্র কয়েক দিনের। কিন্তু একটি নতুন বাড়ি কেনার সময় আমি মাসের পর মাস গবেষণা করি, অনেক বিকল্প দেখি।
দীর্ঘ সেলস সাইকেল থাকলে, গুগল অ্যাডস আমার জন্য বেশি উপযোগী। কারণ এতে সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এর মাধ্যমে আমি গ্রাহকদের “Buying Journey” এর বিভিন্ন পর্যায়ে ধরতে পারি। একজন গ্রাহক যখন প্রথম তথ্য সংগ্রহ করছেন, মধ্য পর্যায়ে বিভিন্ন অপশন তুলনা করছেন বা শেষ পর্যায়ে কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন – আমি সেই সব মোমেন্টে তাদের সামনে থাকতে পারি।
ছোট সেলস সাইকেলের জন্য, ফেসবুক অ্যাডস ভালো কাজ করে। সোশ্যাল মিডিয়া আমাকে দ্রুত ইমোশনাল কানেকশন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা কম দামের পণ্য বা সহজ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী।
আপনি কি B2B না B2C – প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ
আমি B2B বিজনেস চালাই? নাকি B2C? এটা বুঝে নেওয়া খুবই জরুরি।
B2B (বিজনেস টু বিজনেস) মার্কেটিং এর জন্য, আমি গুগল অ্যাডসকে বেশি পছন্দ করি। কারণ, অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত গুগলে সলিউশন খোঁজে, বিশেষ করে যখন তারা পেশাদার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে চায়। লিংকডইন অ্যাডসও B2B মার্কেটিং এর জন্য দারুণ, কিন্তু আজকে আমরা শুধু গুগল ও ফেসবুক নিয়েই আলোচনা করছি।
B2C (বিজনেস টু কনজিউমার) ব্যবসার জন্য, ফেসবুক অ্যাডস অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে। কারণ এখানে আমি ভিজুয়াল কন্টেন্ট দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারি, তাদের লাইফস্টাইল এবং আগ্রহের উপর ভিত্তি করে টার্গেটিং করতে পারি।
কাস্টমার কোথায় অ্যাকটিভ থাকে – Google নাকি Facebook
আমার কাস্টমাররা কোথায় সময় কাটায় – এটা জানা জরুরি। আমি প্রতিদিন দেখি অনেক কাস্টমারই দিনে কয়েকবার ফেসবুক চেক করে, কিন্তু গুগল সার্চ করে শুধু প্রয়োজনে।
ফেসবুক হল “পুশ” মার্কেটিং – আমি কাস্টমারদের সামনে আমার বিজ্ঞাপন “পুশ” করি, এমনকি যখন তারা আমার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সক্রিয়ভাবে ভাবছে না।
গুগল হল “পুল” মার্কেটিং – কাস্টমাররা যখন নিজেরাই আগ্রহী হয়ে কিছু খুঁজছে, তখন আমি তাদের সামনে হাজির হই।
আপনার মার্কেটিং বাজেট
আমার বাজেট সীমিত হলে, আমাকে স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ফেসবুক অ্যাডস সাধারণত প্রতি ক্লিকে কম খরচ নিয়ে থাকে (CPC কম)। আমি কম বাজেটে শুরু করতে পারি, এমনকি দৈনিক 500 টাকা দিয়েও।
গুগল অ্যাডসে প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় CPC বেশি হতে পারে, বিশেষ করে জনপ্রিয় কীওয়ার্ডে। তবে, এতে কনভার্শন রেট বেশি হতে পারে কারণ ব্যবহারকারীরা ইতিমধ্যেই কিছু খুঁজছে।
আমার পরামর্শ: শুরুতে ফেসবুক অ্যাডস দিয়ে ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস বাড়ান, তারপর গুগল অ্যাডস দিয়ে “হট লিডস” ধরুন – যারা সত্যিই আগ্রহী।
উভয় প্ল্যাটফর্মের সফল ব্যবহারের কৌশল
ক্রস-প্ল্যাটফর্ম মার্কেটিং কৌশল
গুগল আর ফেসবুক – দুটোই ব্যবহার করা আমার কাছে মানে দুই হাতে দুই অস্ত্র নিয়ে লড়াই করা। কোনটাই বাদ দেওয়া যায় না। এক প্ল্যাটফর্মে আমি যা পাই, অন্যটায় তা পাই না। দুটো একসাথে ব্যবহার করলে আমি টার্গেট অডিয়েন্সের সামনে বারবার আমার ব্র্যান্ড দেখাতে পারি।
আমি এমনভাবে কৌশল নিই যে গুগলে সার্চ করে যারা আমার ওয়েবসাইটে আসে, তাদের ফেসবুকে আবার টার্গেট করি। এটা করে আমি ব্র্যান্ড রিকগনিশন বাড়াই। একটা প্ল্যাটফর্মে যদি কনভার্শন না হয়, অন্যটায় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বাজেট বিভাজন করতে আমি 70-30 বা 60-40 রেশিও ফলো করি। প্রাথমিকভাবে যে প্ল্যাটফর্মে ভালো পারফর্ম করে সেখানে বেশি বাজেট দিই, বাকিটা অন্য প্ল্যাটফর্মে টেস্টিং করি।
অপটিমাইজেশন টিপস
কোন অ্যাড কখন চালাব? গুগলে আমি সকালে বেশি বাজেট দিই কারণ তখন সার্চ ভলিউম বেশি থাকে। ফেসবুকে সন্ধ্যাবেলা ভালো রেসপন্স পাই যখন লোকজন রিলাক্স করে স্ক্রল করে।
গুগল এবং ফেসবুক উভয় ক্ষেত্রেই A/B টেস্টিং আমার নিয়মিত কাজ। কোন হেডলাইন, কোন ইমেজ, কোন কপি – সবই আমি টেস্ট করি। একসাথে 2-3টার বেশি ভেরিয়েবল চেঞ্জ করি না, নাহলে কোনটা কাজ করল বুঝা যায় না।
সাপ্তাহিক পর্যালোচনা করা আমার অভ্যাস। কোন কীওয়ার্ড বেশি ক্লিক আনছে, কোন ডেমোগ্রাফিক বেশি কনভার্ট করছে সেগুলো দেখি। খারাপ পারফর্ম করা অ্যাডগুলো বন্ধ করে দিই, ভালো করা অ্যাডগুলোতে বেশি বাজেট দিই।
পারফরম্যান্স ট্র্যাকিং এবং এনালিটিক্স ব্যবহার
ট্র্যাকিং ছাড়া অ্যাড চালানো মানে অন্ধকারে তীর ছোড়া। আমি Google Analytics, Facebook Pixel এবং UTM প্যারামিটার একসাথে ব্যবহার করি। এতে করে কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে কী পরিমাণ ট্রাফিক আসছে, কোন সোর্স থেকে কনভার্শন বেশি হচ্ছে, সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারি।
কনভার্শন ট্র্যাকিং দিয়ে আমি সব অ্যাকশন ট্র্যাক করি – সাইটে ভিজিট, কার্টে এড, পারচেজ, ফর্ম সাবমিশন, সবকিছু। এতে আমার অ্যাডের ROI পরিষ্কার বোঝা যায়।
অ্যাট্রিবিউশন মডেল আমি মাল্টি-চ্যানেল ব্যবহার করি। কারণ শুধু লাস্ট ক্লিক দেখলে অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অনেক সময় গুগলে সার্চ করে ফেসবুকে অ্যাড দেখে ফিরে আসে, আবার গুগলে ক্লিক করে কিনে – এই জার্নি ট্র্যাক করা জরুরি।
কাস্টম অডিয়েন্স + লুকঅ্যালাইক অডিয়েন্স কৌশলে ব্যবহার
আমার বেস্ট কাস্টমারদের ডাটা দিয়ে লুকঅ্যালাইক অডিয়েন্স তৈরি করা আমার ফেভারিট কৌশল। ফেসবুকে আমি আমার ভালো কাস্টমারদের ইমেইল আপলোড করে তাদের মতো আরও লোক খুঁজে বের করি। গুগলে সিমিলার অডিয়েন্স তৈরি করি।
শপিং কার্টে প্রোডাক্ট এড করা কিন্তু কিনতে ভুলে গেছে – এমন লোকদের আমি কাস্টম অডিয়েন্স বানিয়ে টার্গেট করি। ডিফারেন্ট স্টেজে ডিফারেন্ট মেসেজ দেই – প্রোডাক্ট দেখেছে কিন্তু কার্টে এড করেনি, কার্টে এড করেছে কিন্তু কিনেনি, এরকম।
কাস্টম অডিয়েন্স + লুকঅ্যালাইক অডিয়েন্স কৌশলে ব্যবহার
আমি কখনই শুধু একটা প্ল্যাটফর্মে রিমার্কেটিং করি না। গুগল ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক, ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম – সবগুলোতে একসাথে রিমার্কেটিং চালাই। এতে করে আমার টার্গেট অডিয়েন্স যেখানেই যাক, আমার অ্যাড দেখবে।
সময় অনুযায়ী মেসেজ চেঞ্জ করি। প্রথম দিন প্রোডাক্ট ফিচার, 3-4 দিন পরে ডিসকাউন্ট অফার, 7 দিন পরে শেষ সুযোগ – এভাবে। ফ্রিকোয়েন্সি ক্যাপ সেট করি যাতে একজন ব্যক্তি একই অ্যাড অনেকবার না দেখে বিরক্ত হয়।
এই অমনিচ্যানেল অ্যাপ্রোচ আমাকে হেল্প করে যাতে কাস্টমাররা আমাকে ভুলে না যায়। এটা কনভার্শন রেট 40-60% পর্যন্ত বাড়াতে পারে।
Google Ads এবং Facebook Ads উভয়ই শক্তিশালী ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এদের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। গুগল অ্যাডস সার্চ ইন্টেন্ট এবং সরাসরি চাহিদা পূরণে সেরা, যেখানে ফেসবুক অ্যাডস ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়াতে এবং টার্গেটেড অডিয়েন্সে পৌঁছাতে দক্ষ। আপনার ব্যবসার লক্ষ্য, পণ্য বা সেবার ধরন, এবং টার্গেট অডিয়েন্সের উপর ভিত্তি করে সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করুন।
সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য, বিভিন্ন কৌশল পরীক্ষা করুন এবং উভয় প্ল্যাটফর্মে আপনার পারফরম্যান্স পরিমাপ করুন। মনে রাখবেন, অনেক সফল ব্যবসায়ীরা তাদের ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশলে গুগল এবং ফেসবুক উভয় প্ল্যাটফর্ম একসাথে ব্যবহার করে থাকেন। আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক মিশ্রণ খুঁজে বের করুন এবং আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আপনার ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।
10 Business Hacks to Boost Your Productivity Today পড়তে এখানে ক্লিক করুন